মোর্শেদুর রহমান: গত দশক থেকে চীনের উত্থান নিয়ে ভারত খুব চিন্তিত ছিল। কিন্তু, তারা যে একা চীনের সাথে পারবে না এইটা তারা ভালো মতোই বুঝতে পেরেছিল।

চীনের এই উত্থান স্বাভাবিক ভাবেই আমেরিকার ও সহজ ভাবে নিতে পারেনি। এর ফলে ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয় মূলত ২০১৮ সালের জুন থেকে। কিন্তু চীন শুধু মাত্র যে বানিজ্যিক ভাবে শক্তিশালী তা কিন্তু নয়। তারা সামরিক ভাবে ও বিশ্বে শক্তিশালী একটি দেশ। তাই মূলত চীনকে সামরিক ভাবে আটকানোর জন্য, ২০০৭ কোয়াড্রালেটারাল সিকিউিরিটি ডায়ালগে (কোয়াড) প্রতিষ্ঠিত হয়। কোয়াডের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত জড়িত। এই জোটকে তাই এশিয়ার ন্যাটোও বলা হচ্ছে৷ প্রাথমিক ভাবে এশিয়ায় চীনের সকল ধরনের সক্ষমতা বৃদ্ধি বন্ধ করাই এই জোটের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশের বন্ধু দেশ ভারত। ভারত যেহেতু কোয়াডের সাথে আছে! স্বাভাবিক ভাবেই কোয়াড়ের একটি প্রভাব বাংলাদেশে থাকার শঙ্কা থেকেই যায়। এই দিকে চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার। এই দেশে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ফলে, বাংলাদেশকে নিয়ে শংকিত হওয়ার যথেষ্ট কারন আছে।

বাংলাদেশ যদি কোয়াডের সাথে যুক্ত হয়! তাহলে আমেরিকার কাছ থেকে “অর্থনীতি” ও ” সামরিক” সহায়তা পাবে। তবে, বাংলাদেশকে তারা চাহিদা অনুযায়ী দিবে কি না! সেখানেও ভাবার বিষয় আছে।

আগেই বলেছি! বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার হচ্ছে চীন। চীনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে বেল্ট অ্যান্ড রোড। এর মাধ্যমে বিশ্বের বানিজ্যের প্রাণ কেন্দ্র হতে চায় চীন। এই বেল্ট অ্যান্ড রোড এর মধ্যে বাংলাদেশ ও পরে স্বাভাবিক ভাবেই। বাংলাদেশ যদি কোয়াডে যায়, তাহলে এক প্রকার আমেরিকার ব্লকেই চলে যাওয়া।এর জন্য ভৌগোলিক ভাবেই তা বেল্ট অ্যান্ড রোড এর বাঁধার সম্মক্ষীন হবে এবং যার ফলে চীন-বাংলাদেশের সম্পর্কে ফটল ধরবে খুব সহজেই।

আমেরিকা ন্যাটোর মাধ্যমে সারা বিশ্বে একটি শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু মাত্র ” তৃতীয় বিশ্ব ও উন্নয়নশীল” দেশ ছাড়া। ঠিক এই জায়গা টাই চীন ধরতে চাইছে।

কিন্তু কোয়াড এর যদি প্রভাব বিস্তার করতে পারে এই এশিয়ায়, তাহলে চীনের “সুপার পাওয়ার” দেশ হওয়ার সপ্নে বিশাল বাধা পাবে। কারণ, চীনের বিশ্ব বানিজ্যের সিংহভাগই আসে এই এশিয়া থেকে। এর জন্যই চীন এতোটা চিন্তিত।

কোয়াড মূলত ন্যাটোর একটি শাখা। ফলে, দক্ষিণ এশিয়ায় চীন ও আমেরিকার দুইটি শক্তিশালী ব্লক তৈরি হবে। তার ফলশ্রুতিতে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশাল পরিবর্তন আসবে এবং একটি সার্বিক সংকট তৈরি হবে।

পরিশেষে বলতে চাই! এই দুই ব্লকই বাংলাদেশকে ব্যবহার করবে নিজেদের স্বার্থের জন্য। সুতরাং, বাংলাদেশের উচিত হবে কোন ব্লকে না যেয়ে সুকৌশলে দুই ব্লক থেকেই নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা।